শারীরিক/ অভিজিৎ চক্রবর্তী


https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif
https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif

https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif
বহুদিন পর একাকীত্ব পেয়েছে সে। তা প্রায় অনেক বছর। ছোটোবেলা এমন মাঝে মাঝে ঘরে কেউ না থাকলে ন্যাঙটো হয়ে যেত সে। তারপর বিছানায় উঠে লাফ। লাফাতে লাফাতে বালিশ ছিঁড়ে যেত। তবু লাফ থামত না। সে কি মজা। আজ অনেকদিন পর এমন একাকী। উলঙ্গ হবার মত এমন একাকী। অতনুর অনেক সময়েই এই পোশাক পড়া টড়া ভালো লাগে না। এই গলায় একটা ছাগলের ল্যাজ ঝুলিয়ে এরপর মাঞ্জা মারা ঝা চকচকে শার্ট প্যান্ট পরে গাড়িতে গিয়ে বসো। এরপর যাও সোজা অফিস। সেখানে সবকিছু মাপা। চলা ফেরা। এমনকি পার্টিতে খাবার সময় মুখ বন্ধ করে চিবুতে হয়। তারপর নানাবিধ টেবিল ম্যানার। কাটা চামচ ছুরি ইত্যাদি ইত্যাদি। সে যাক এ তো অফিসের কথা। কিন্তু বাড়িতে যাকে বিয়ে করে এনেছে সে, মেয়েটি আবার সংস্কৃতিবান। অর্থাৎ ঐ আর কি গান বাজনা রবীন্দ্র রবীন্দ্র ভাব। বড়লোকের মেয়ে। কবিতা ফবিতা পড়তে পড়তে কথাগুলোও কেমন ন্যাকা ন্যাকা। পান থেকে চুন খসলে ' কী যে করনা তুমি'
বলে এমনভাবে তাকায় মনে হয় কোনো নাটকের পার্ট করছে।
অতনু শরীর ভালোবাসে। সে ওয়াইল্ড অনেকটা। সে ওরাল সেক্স ভালোবাসে। সাফ কথা। বিদেশি ছবিগুলি দেখতে দেখতে হিট উঠে যায় তার। খাজুরাহ দেখেছে অনেকবার। শরীর তো মন্দির। আবার যাবার ইচ্ছা। মন্দিরে দেবদাসীদের মূর্তি দেখে কতদিন সে রাতে স্বপ্নও দেখেছে। কুমোড়পাড়ায় মূর্তি বানানোর সময় সে রোজ যেত কীভাবে সমান বুক পুষ্ট হয়ে ওঠে। তাল তাল মাটি দিয়ে মাখতে মাখতে ঘষতে ঘষতে গোল হয়ে ওঠে বুক। স্তন। যেন এক শিল্প। এরপরই যেন মাকে মা বলে মনে হতো। এর আগে নয়। সে ভাবে, আমাদের দেশ তো শরীর ঢেকে রাখেনি। আমাদের ভগবানও তো গায়ে কিছু দেয় না। সব বিদেশ থেকে এসেছে। এই বুক ঢেকে রাখাও। আরে ভগবান মানেও তো--
কিন্তু বহুদিন বিছানায় হাত টান দিয়ে দেখেছে অনেকটাই নিষ্প্রভ। ঐখানে একদিন হাত দেবার পর এমন একটা ভাব করেছে যেন, সে ক্রিমিনাল কেসের আসামী। কয়েকদিন গম্ভীর। কয়েকদিন খালি গান। দুঃখী দুঃখী ভাব। রবীন্দ্রনাথ। পরে নানা প্রসঙ্গে নানা সময়ে এমনকি ডিনার টেবিলেও অতনুকে এটা শোনানো হয়েছে যে, পুরুষের খাই খাই মেজাজ ঘেন্নার যোগ্য। এই ধরণের লোকগুলোই ধর্ষণ করে। এদের জন্য সমাজে এ অবস্থা। শরীর তো স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু প্রেমই তো আসল। শরীরকে নিয়ে তারাই বেশি উৎসাহী হয় যাদের হৃদয়ে প্রেম নেই। এরপর থেকে অতনু একটু সমঝে চলে। এমনকি আঙুল ধরতেও ভয় পায়। আরে গায়ে হাত না দিয়ে কি ওসব হয়অতনু জেনেছে রবীন্দ্রনাথেরও ছেলে মেয়ে ছিল। ও জানে কি? ভাবতে ভাবতে হাসি উঠে তার। এই ব্যাটা রবীন্দ্রনাথ বিছানাতেও তার প্রতিপক্ষ। বিয়ের পর প্রায় ছ মাস। অতনু মাঝেমাঝে ভাবে, সার্থক তার নামখানা। অতনু। এখন তো তনুহীন হতে চলেছে সে। কারণ বাড়িতে ইদানীং খালি গায়েও বসা যাচ্ছে না। এই নিয়েও আপত্তি। কী বিসদৃশ লাগে ছেলেদের এইসব অভ্যাস। বুকের লোম বগলের লোম সব দেখা যায়।
অতনু দেওয়ালে ঝুলতে থাকা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায়। শ্রীকৃষ্ণ খালি গায়ে শ্রীরাধার সঙ্গে--

অতনু কী করতে পারে। শরীর ধরতে গেলে আগে লাইট নেভাতে হয়। এমনকি ডিমলাইটও না। অন্ধকারে সারা বিছানা হাতড়েও অনেক সময় খুঁজে পায় না। লজ্জাবতী কোথায় লুকিয়ে আছে কে জানে। নিজেকে ক্ষুধার্ত সিংহের মত হিংস্র মনে হয়। যেন নিরীহ হরিণ শিকার করতে যাচ্ছে। অপরাধী অপরাধী লাগে। এমনকি নিজের শরীরকেও ভুলতে বসেছে সে।
 
আজ বহুদিন পর সে একা। নিজের শরীরটির দিকে সে তাকায়। নিজেকে গ্রীক কোনো ভাস্কর্যের মত মনে হয়। সে বিছানায় উঠে দাঁড়ায়। তারপর ছোটোবেলার মত লাফাতে শুরু করে। একবার দুবার তারপর বারবার বারবার। এই শরীর বাবা মা থেকে শুরু করে সবাই কত তেল কত রোদ কত আদর দিয়ে বড় করে তুলেছে। শরীর ছুঁলেই সে শিকড়ের আস্বাদ পায়। দেহ দিয়েই সে ছুঁয়ে দেখে অতীতের পিতামহ বংশজদের শরীর। এই দেহ তার একার নয়। তার বংশের। নাভি ছুঁয়ে দেখে সে। যেন মাকে ছুঁতে পারে সে।

লাফাতে থাকে আরও জোরে। লাফাতে লাফাতে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘাম ঝরতে থাকে। শরীর মানেই বেদনা। শরীর না থাকলে কোনো বেদনা থাকত না তার। সবই এই শরীর ঘিরেই। হাঁটতে হাঁটতে সে আয়নার সামনে যায়। কোথাও কিছু নেই। বিয়ের আগে এই শরীরকেই ঘিরে যত উল্লাস। গায়ে হলুদের দিন বৌদিরা কত মজা করছিল। তার নিজেরও মজা লাগছিল। কেমন নিষ্প্রাণ লাগে এখন। যেন কোনো উৎসব নেই। শূন্য ফাঁকা মাঠ। কী নেই তার। সে ভাবে। সবই তো আছে। তবু নেই। কিছু নেই। দমবন্ধ লাগে তার। অনেকদিনই তাকে অশিক্ষিত গেঁয়ো শুনতে হয়েছে। ভাবে, তার নিজের ঘর। আজ পরনে কাপড় দিলেও গায়ে সে কোনো কাপড় দেবে না। ক্যালেন্ডারের ভগবানের মত থাকবে। খালি গায়ে। সুতোও দেবে না। পারলে সুযোগ পেলে রাতেও কিছু না পরে ঘুমোবে। মনে মনে ছক কষে। ভালোবাসা শরীর ছাড়াহয় না। ভালোবাসতে গেলে শরীর চাই। শরীর চাই। শরীর ছাড়া কিছু নাই।
ধরতে পারে না সে। যখনই যায়। মনে হয়
ভুল করে ফেলছে না তো?
দরজার শব্দ হয়। এসেছে বোধহয়। অতনু চুপচাপ দরোজার কাছে যায়। পরনে কিছুই নেই। দরোজা খোলে।
 
বউ ঘরে ঢোকে। তারপর ধীরে ধীরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়। একে একে গয়নাগুলো খুলে রাখে। তারপর পাশে রাখা অতনুর ছবির দিকে তাকায়।
তারপর ফিসফিস করে বলে তুমিও না এমন অভিমানী। একটু জোর করতে পারলে না। তারপর আরো ছবির কাছে এসে বলে সত্যি শরীর ছাড়া কিছু নেই। অতনু দেখল আয়নায় তার মত তার বউয়েরও কোনো প্রতিচ্ছবি নেই।

 




https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif
https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif



https://mail.google.com/mail/u/0/images/cleardot.gif






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অভিমন্যু

কবি জাফর সাদেক, যার কোনো উত্তরসূরী নেই, অভিজিৎ চক্রবর্তী